সারাবছরই ভেজাল বিরোধী অভিযান দেখতে চায় ভোক্তারা
প্রকাশিত : ১৫:২৫, ৪ জুন ২০১৯ | আপডেট: ১৮:৩২, ৪ জুন ২০১৯

রমজান মাস জুড়ে চলমান ভেজাল বিরোধী অভিযান স্বাগত জানিয়েছেন সাধারণ ভোক্তাসহ সংশ্লিষ্টরা। সরকারের এই ধরণের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তারা। তবে ঈদের পরেও এধরণের অভিযান চলমান দেখতে চায় সাধারণ ভোক্তারা।
রমজানজুড়ে এবারের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে ভেজাল বিরোধী অভিযান। মূলত বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় রমজানে অভিযানগুলো কয়েকগুণ বেশি চালানো হয়।
রমজানের শুরুতে সংসদে দাঁড়িয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মাদক বিরোধী অভিযানের ন্যায় ভেজাল বিরোধী অভিযানকে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সাধারণ মানুষের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে নামীদামী ব্যবসায়ী ভোগ্য পণ্য থেকে শুরু করে নামকরা সব প্রতিষ্ঠানে ভেজাল বিরোধী অভিযান চালায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই), জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, র্যাব, পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালনা করেন।
এসব অভিযানে দেশের নামকরা সব পণ্য প্রতিষ্ঠানের ৯৫ ভাগ পণ্যই মানুষের ব্যবহারের অনুপযোগী প্রমাণিত হয়।
রাজধানীসহ বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে ভেজাল বিরোধী অভিযান ছিল চোখে পড়ার মত।
রমজান উপলক্ষে রাজধানীজুড়ে রমজান খোলা বাজার থেকে ৪০৬টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে বিএসটিআই। প্রতিবেদন পাওয়া ৩১৩টি পণ্যের মধ্যে ৫২টি পণ্য নিম্নমানের প্রমাণিত হয়।
এসবের মধ্যে সরিষার তেল, হলুদের গুঁড়া, কারি পাউডার, লাচ্ছা সেমাই, আয়োডিনযুক্ত লবণ, ড্রিংকিং ওয়াটার, স্পেশাল ঘিসহ এসব নিম্নমানের পণ্য দেশের নামি-দামি ব্র্যান্ডের।
নিষিদ্ধ পণ্যগুলো হলো- তীর, জিবি, পুষ্টি ও রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের সরিষার তেল, সান ব্র্যান্ডের চিপস, আরা, আল সাফি, মিজান, দিঘী, আর আর ডিউ, মর্ণ ডিউ ব্রান্ডের ড্রিংকিং ওয়াটার, ডানকানের ন্যাচারাল মিনারেল ওয়াটার, মিষ্টিমেলা, মধুবন, ওয়েল ফুডের লাচ্ছা সেমাই, ডুডলি ব্র্যান্ডের নুডলস, টেস্টি তানি তাসকিয়া ও প্রিয়া সফট ড্রিংক পাউডার, ড্যানিশ, ফ্রেশ ব্র্যান্ডের হলুদের গুঁড়া, ড্যানিশ ব্র্যান্ডের কারি পাউডার, বনলতা ব্র্যান্ডের ঘি, পিওর হাটহাজারীর মরিচের গুঁড়া, মোল্লা সল্টের আয়োডিনযুক্ত লবণ, কিং ব্র্যান্ডের ময়দা, রূপসা ব্র্যান্ডের দই, মক্কা ব্র্যান্ডের চানাচুর, মেহেদী ব্র্যান্ডের বিস্কুট, বাঘাবাড়ী স্পেশালের ঘি, নিশিতা ফুডসের সুজি, মধুবনের লাচ্ছা সেমাই, মঞ্জিল ফুডের হুলুদের গুঁড়া, মধুমতি ব্র্যান্ডের আয়োডিনযুক্ত লবণ, সান ব্র্যান্ডের হলুদের গুঁড়া, গ্রীনলেনের মধু, কিরণ ব্র্যান্ডের লাচ্ছা সেমাই, ডলফিন ব্র্যান্ডের মরিচের গুঁড়া, ডলফিন ব্র্যান্ডের হলুদের গুঁড়া, সূর্য ব্র্যান্ডের মরিচের গুঁড়া, জেদ্দা ব্র্যান্ডের লাচ্ছা সেমাই, অমৃত ব্র্যান্ডের লাচ্ছা সেমাই, দাদা সুপার, তিন তীর, মদিনা, স্টারশিপ ও তাজ ব্র্যান্ডের আয়োডিন যুক্ত লবণসহ ৫২টি ব্র্যান্ডের পণ্য।
ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে আদালতে রিট করে কনশাস কনজুমার সোসাইটি নামের একটি সংগঠন। শুনানি শেষে ১০ দিনের মধ্যে এই ৫২টি খাদ্যপণ্য বাজার থেকে তুলে নেয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
কয়েক দফা নোটিশের পরও নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও অপসারণ হয়নি সবকটি পণ্য। এমন অবস্থায় আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন না করায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছিল। এখনো বাজারে সেসব পণ্য দেদারসে কেনাবেচা হচ্ছে।
এবছর ভেজাল বিরোধী অভিযানে প্রায় কয়েশ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে কয়েক কোটি টাকা জরিমানা করে সংস্থাগুলো।
ভেজাল বিরোধী এসব অভিযানে আদালত অন্যান্য বছরের তুলনায় কঠোরতা দেখিয়েছেন, নিয়েছেন কার্যকরি উদ্যোগ। ফলে, গোটা রমজানে ভেজাল পণ্য প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের শোধরানোর উপায় খুঁজতে থাকে।
ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান ও আদালত শুধু নয়, সরব ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠানগুলো। ব্যাপক প্রশংসা পায় সরকারের এমন উদ্যোগ।
রমজান শেষ হলেও এখনো হাত বাড়ালেই মিলছে মানহীন এসব পণ্য। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে ঈদের পর এসব পণ্য নতুন করে বাজার দখল করে কিনা।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পরিচালক মো. হারুন-উজ-জামান ভূইয়া একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, মানহীন এসব পণ্য বাজারে যাতে নতুন করে ছড়িয়ে না পড়ে সেদিকে আমরা খেয়াল রাখবো। রমজানে যেভাবে এসব পণ্যগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, অন্যান্য সময়েও এখন থেকে তা জোরদার থাকবে। সাধারণ মানুষের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চয়তা না হওয়া পর্যন্ত এসব অভিযান অব্যহত থাকবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন